বাংলাদেশের জনগণের পুষ্টি পরিস্থিতি

এসএসসি(ভোকেশনাল) - এগ্রোবেসড্ ফুড -১ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | | NCTB BOOK
1

বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা ও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের জনগণের এক বিরাট অংশ বিভিন্ন প্রকারের অপুষ্টিতে ভুগছে। বাংলাদেশে অপুষ্টির প্রথম এবং প্রধান শিকার হচ্ছে মা ও শিশু। যুক্তরাষ্ট্রের USAID বাংলাদেশ নারী ও শিশু স্বাস্থ্য ২০১১ইং শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছে- এদেশে মায়েদের এক-তৃতীয়াংশ অপুষ্টির শিকার, উচ্চতার তুলনায় তাদের ওজন কম জাতিসংঘের FAO পুষ্টি জরিপ-১১তে বলা হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নারীর পুষ্টিহীনতার দিক থেকে বাংলাদেশ শীর্ষে। এতে আরও বলা হয়েছে বাংলাদেশে ৫০% এর বেশি নারীই পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। বিগত অক্টোবর ২০০৯ তারিখে অনুষ্ঠিত ১৯তম আন্তর্জাতিক পুষ্টি সম্মেলনে (ব্যাংকক) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহকারী মহাসচিব বলেছেন বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ শিশু মৃত্যুর কারণ অপুষ্টি। পৃথিবীর যে ৩৬টি দেশে অপুষ্টি বেশি তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সাউথ এশিয়ান ইনফ্যান্ট ফিডিং রিসার্চ নেটওয়ার্কের এক গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের প্রায় অর্ধেকই অপুষ্টিতে আক্রান্ত। ৫ বছরের কমবয়সী শিশুর ৫০% এর মৃত্যুর কারণ অপুষ্টি। বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিশু পুষ্টি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম কিউ, কে তালুকদারের মতে শুধু অপুষ্টির কারণে দৈনিক ২০০ শিশু মারা যাচ্ছে।

বিশ্বব্যাংক ২০০৬ এর রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে নবজাতকের মৃত্যুর হার ২৮%। এক বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর হার ৩%। কম ওজনে জন্মানো শিশুর হার ১৯%। রক্তস্বল্পতায় ভোগে ৫০% এবং গর্ভবর্তী মা রক্তশূন্যতায় ভোগে ৪৬%। বাংলাদেশের ৪০% লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। এরা দীর্ঘস্থায়ী খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। দেশের ৫০% নারী ও শিশু আয়রনের অভাবে ভুগছে। অপুষ্ট মা অপুষ্ট শিশু অদক্ষ কর্মী অপুষ্টির এ চক্রে বছরে দেশের প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী বাংলাদেশের অপুষ্টির ব্যপকতা অতি উচ্চ হারের চেয়েও বেশি। এদেশে খর্বাকৃতি অর্থাৎ স্টান্টিং (Stunting) প্রায় ৩৬%। উচ্চতার তুলনায় ওজনআধিক্য বা ওয়েস্টিং (Wasting) ১৪% ও বয়সের তুলনায় ওজন স্বল্পতা বা আন্ডারওয়েট (Under weight) প্রায় ৩২% যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যমান প্রধান পুষ্টি সমস্যা ও সম্ভাব্য কারণ নিম্নের ছকে দেওয়া হলো-

ক্রমিক নং

সমস্যা

কারণ

অসম খাদ্য বণ্টনখাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির অসমতা, ফলে অসম খাদ্য বণ্টন, খাদ্য মূল্য বৃদ্ধি, | অপর্যাপ্ত গুদামজাতকরণ, খাদ্য অপচয়ও খাদ্য ঘাটতি সৃষ্টি করে ।
ক্যালরি গ্রহণ হ্রাসমাথাপিছু প্রতিদিন ২৩০১ কিলোক্যালরি থেকে ১৯৬১ কিলোক্যালরিতে নেমে গেছে।
শিশুর অপুষ্টি৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা বিভিন্ন মাত্রার অপুষ্টিতে আক্রান্ত। শিশু মৃত্যুর হার বেশি, শিশু স্বল্প ওজন নিয়ে জন্মায় অর্থাৎ জন্মকালীন ওজন ২.৫ কেজির ও কম। অল্প বয়সে বিবাহ, ঘন ঘন সন্তান প্রসব, মায়ের অপুষ্টি ও স্বাস্থ্যহানি শিশুর অপুষ্টির প্রধান কারণ।
মায়ের অপুষ্টিপ্রতি ১০০০ সন্তান জন্মদানে ৫৬ জন মা গর্ভকালীন জটিলতায় মারা যায়। দৈহিক ক্লেশ, অপর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাদ্য, কুসংস্কার, মায়ের অপুষ্টির প্রধান কারণ।
রক্তস্বল্পতামহিলা, গর্ভবতী মহিলা এবং ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা রক্ত স্বল্পতায় ভূগছে। কৃমি রোগ, আমাশয়, আমিষ ও লৌহের ঘাটতি, ঘন ঘন সন্তান জন্মদান, রক্ত স্বল্পতার প্রধান কারণ ।
ভিটামিন-‘এ’ এর অভাবপ্রতি বছর ৩০,০০০ শিশু ভিটামিন- ‘এ' এর অভাবে অন্ধ হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক শিশু অন্ধ হয়ে পড়ার পর মারা যায়। এর প্রধান | কারণ হচ্ছে ছোট ছেলেমেয়েদের ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ শাক-সবজি খাওয়ানো হচ্ছে না, রান্নায় তেল ব্যবহার খুবই অল্প, শাল দুধ ফেলে দেওয়া ইত্যাদি ।
আয়োডিনের অভাব৬৯% জনগণের মধ্যে আয়োডিনের অভাব। ৪৭% জনগণের মধ্যে গলগন্ড দেখা গেছে। ৫ লক্ষ লোক আয়োডিনের অভাবে মানসিক প্রতিবন্ধকতায় আবদ্ধ। মাটি, পানি ও খাদ্যে আয়োডিনের ঘাটতি।
অন্যান্য অণু পুষ্টি উপাদানের অভাবফলিক এসিড, রিভোফ্লাভিন এবং দস্তা ইত্যাদি অনুখাদ্যের অভাব কিশোরী মেয়ে ও পুরুষের মধ্যে দেখা যায়। আমিষ খাদ্যের স্বল্পতা, পেটের অসুখ প্রভৃতিতে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয় ।
Content added || updated By
Promotion